সর্বশেষ আপডেট



» বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত

» ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ

» আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া

» গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন 

» ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস

» জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন

» ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন

» ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’

» ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল

» ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”

» ফরহাদনগরে ছাত্রদল নেতা জিয়া উদ্দিনের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পথে ঘুরছে বৃদ্ধা দুই অসহায় বোন

» বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটির পরিচিতি ও শিক্ষার মানোন্নয়নে সভা

» ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ৩৫তম ব্যাচের নবাগত শিক্ষার্থীদের বরণ

» ফেনীতে জলবায়ু পরিবর্তন ও সচেতনতা বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ

» উত্তর চন্ডিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি এম. আনোয়ারুল ইসলাম

» স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বাবুর মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া ও মিলাদ

» বাম গণতান্ত্রিক জোটের ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের রোডমার্চ ফেনী ছাড়লো- দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত 

» সাপ্তাহিক ফেনী সংবাদ এর প্রতিনিধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

» ফেনীতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভে বক্তারা বলেন- মুসলিম ভূখণ্ডে হামলা করে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করা অসম্ভব

» ফেনী জেলা যুবদলের ৫১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা

সম্পাদক: শওকত মাহমুদ
মোবাইল: ০১৮১৩-২৯২৮৩৫
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মোজাম্মেল হক মিন্টু
নির্বাহী সম্পাদক: শাহজালাল ভূঁঞা
মোবাইল: ০১৭১৭-৪২২৪৩৫, ০১৮১৯-৬১৩০০৫

সহ-সম্পাদক: শেখ আশিকুন্নবী সজীব
মোবাইল: ০১৮৪০-৪৪৪৩৩৩
সম্পাদকীয় ও বার্তা কার্যালয়: শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতান(৬ষ্ঠ তলা), স্টেশন রোড, ফেনী-৩৯০০।
ই-মেইল: ajeyobangla@gmail.com

Desing & Developed BY GS Technology Ltd
৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,১৫ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কে কার ? -ফেরদৌস আরা শাহীন

::::আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে (মন্তব্য কলাম) ::::

দুটো ঘটনা বলব। বেশ কাছ থেকে দেখা। একটি ১৬/১৭ বছর আগে ঘটা, দ্বিতীয়টি বছরখানেক আগে। দুটিই দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে। দুটি ঘটনাতেই স্বামী প্রায় অসময়ে স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন।
প্রথম ঘটনা দেখি যখন আমার বয়স ২৪/২৫। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সে কী মধুর সম্পর্ক। বলার মতো না। দুজনই চাকরি করতেন। নিজ হাতে সবকিছু করে তৃপ্তি পেতেন বলে স্ত্রীটি বাসায় কোন কাজের লোক রাখতেন না। ভোরে ওঠে সংসারের সব কাজ সেরে মহিলাটি কর্মস্থলে যেতেন। বাসায় ফিরে আবার সেই কাজের মধ্যে ডুবে যাওয়া। দুই সন্তানের পড়াশোনাও ছিল নিজের দায়িত্বে। কোন টিউটরও ছিল না ওদের। ধর্মকর্ম করতেন নিয়মমত। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো মহিলাটি অসুখে পড়লেন। নিজের দিকে ঠিকমত খেয়াল না দিয়ে সবকিছু সামলাতে সামলাতে কখন যে ফুসফুসে ক্যান্সার বাঁধালেন নিজেই টের পেলেন না। সীমিত আয়ের এই পরিবারটি দেশে নানাভাবে চিকিৎসার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সুস্থ হলেন না। কাছের মানুষরা পরামর্শ দিলেন মাদ্রাজ যেতে। গেলেন।

 

এই ফাঁকে বলে রাখি, উনাকে দেখতে মাঝেমাঝে উনাদের বাসায় যেতাম। তখন দেখতাম স্বামীটি উনাকে ‘জান’ বলে আদুরে সুরে ডাকতেন। শুনেছি এই সম্বোধনটা ছিল উনাদের একান্তই ব্যক্তিগত। কারও সামনে সেটা উচ্চারণ করা হতনা। অসুখে পড়ার পরই ‘জান’ প্রকাশ্যে আসে। মনে মনে ভাবতাম, আহা! মহিলাটি কত সুখী! লোকলজ্জার কথা ভুলে স্বামী কত আদরে ‘জান’ বলে ডাকছে। এই নারী যদি মরে যান তাঁর স্বামীটি কেমন করে শোক সামলাবেন? নাকি শোক সইতে না পেরে মরেই যাবেন? বাচ্চাগুলোর কী হবে? মেয়েটা তো প্রায় বিয়ের যোগ্য হয়েছে, ওর মা মারা যাবার আগে যদি ওর বিয়েটা হয়ে যেত!

 

যাই হোক, উনাকে চিকিৎসার জন্য ভারত নিয়ে যাওয়া হল। স্বামী তাঁর ‘জান’টিকে নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরেও আসেন এবং ছবিটবিও তোলেন। আমার মনে আছে স্বামী-স্ত্রী দু’জন তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে হাত ধরাধরি করে ছবি তুলে সেটাকে বেশ বড় করে বাঁধাই করেও রাখেন। ছবিটা তাদের বেডরুমে এমনভাবে সেট করে রাখেন যেন সবসময় সেটা দেখা যায়। মহিলা জিজ্ঞাসা করেছিলেন- এভাবে কেন এটা রাখলে ? স্বামীর জবাব- বোঝো না জান? তোমাকে এক মূহুর্তের জন্যও চোখের আড়াল করতে চাই না।

 

লোকমুখে এটা শোনার পর মহিলার জন্য হিংসেও হচ্ছিল। যদিও উনার সুস্থ হবার সম্ভাবনা ছিল না। শেষ পর্যন্ত মাস দুয়েকের মধ্যেই তিনি মারা গেলেন। কয়েকদিন পর তাঁর দুই সন্তানকে দেখতে যাই ওই বাসায়। উনার স্মৃতি বিজড়িত সেই বেডরুমে যাই। একি ! সেই হাত ধরাধরির ছবিটা উল্টে আছে। কে উল্টালো ? বাসার কেউ তেমন কিছু বললো না। অস্পষ্টভাবে এর-ওর কাছ থেকে যা জানলাম তা হল- ওই ছবিটা ওভাবে থাকলে ভদ্রলোক স্ত্রীকে ভুলতে পারবেন না। উনাকে দ্রুত ভুলে যেতে হবে এবং বিয়ে করতে হবে।

 

কিন্তু মেয়েকেও তো বিয়ে দিতে হবে। আমি বললাম। বাসার লোকজন জানালেন- উনি পরিস্কার বলে দিয়েছেন- উনার বিয়ের খুব দরকার। মেয়ের বিয়ে পরে হবে। উনার এক আত্মীয় দুষ্টুমী করে আমাকে বলেছিলেন, ‘এ ঘরে পাত্রও আছে পাত্রীও আছে।’ অবাক হয়ে সেদিন নিজের বাসায় ফিরে আসি। এরপর বেশ কিছুদিন ও বাসায় যাইনি। উনি বিয়ে করে যথারীতি বউ ঘরে তোলেন। এরপর মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়। সেই বিয়েতে গেলাম। দেখলাম মেয়ের মায়ের মানে, মৃত মহিলাটির সব গয়না ভদ্রলোকের দ্বিতীয় স্ত্রীকে দেয়া হয়েছে। যে ‘জান’ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন তার পেনশন গ্র্যাচুইটির টাকায় ঘরের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। কুলখানী তো দূরে থাকুক দুটো মিসকিনও খাওয়ানো হয়নি। আর হ্যাঁ উল্টানো (হাত ধরাধরির) ছবিটির কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

 

দ্বিতীয় ঘটনাটা ঘটেছে বছরখানেক আগে। এক্ষেত্রেও হয়ত ‘জান’ ছিলেন মহিলাটি। সোহাগ করে স্বামী ‘জান’ ডাকতেন কিনা জানি না; তবে টোনাটুনীকে এরকমই মনে হতো। কিছুদিন আগে সপরিবারে সড়ক দূর্ঘটনা পতিত হন ভদ্রলোক। বড় ছেলেটা মারাত্মকভাবে আহত হয়। পায়ে তিনবার অস্ত্রোপাচার করতে হয়। এখনও ছেলেটা ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটে। সেবার (২০১৭) এইচ এস সি দিচ্ছিল উনার ‘জান’ আর ছোট ছেলেটা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত বড় ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল ভদ্রলোক মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।
গত ২০১৭ সালের ০৫ মে তারিখে একটা অনুষ্ঠানে ভদ্রলোক এবং তার বড় ছেলের সাথে দেখা হল। ছেলে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল- আন্টি, আমার নতুন মা।

 

কয়েক সেকেন্ড ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে থেকে পরে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করলাম। হিসাব করার চেষ্টা করছিলাম, কবরে উনার আগের স্ত্রী দেহটা এ কয়দিনে পঁচেছে কি না। সবচেয়ে বড় কথা বড় ছেলেটা সুস্থ হওয়া দুরে থাকুক হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই উনি দ্বিতীয় স্ত্রী ঘরে তুলেছিলেন। যাই হোক আমি টুকটাক কথা বলতে চাইলাম। কারণ বড় রাস্তায় গিয়ে বাস ধরতে হবে আমাদের, সেটাও প্রায় আধা কিলোমিটারের মতই পথ। ছেলেকে বিদায় দিয়ে আমরা গন্তব্যের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে বললাম-

 

-ভাই আপনার জীবনে যা ঘটে গেছে সেটা খুবই দুঃখজনক। আল্লাহ আপনাকে শোক সইবার শক্তি দিক।
ভাই চুপ।

 

– ছেলেটা এত অল্প বয়সে মাকে ভাইকে হারালো……উফ্ খোদা…..। নিজেও পুরোপুরি সুস্থ হবে কিনা আল্লাহ্ই জানে…

 

ভাই এবারও চুপ।

 

-আমার ছেলে ওকে ঢাকা সি এম এইচে দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু ওর দেখা পায়নি। সম্ভবত! দেখতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। আপনি কি তখন সেখানে ছিলেন?

 

উনি শুনলেন বলে মনে হল না, কারণ কোন সাড়া পাইনি। আমি বলে চললাম- আশা করি ধীরে ধীরে ও সুস্থ হয়ে উঠবে। মানুষের জীবনে দু একবার এরকম কঠিন ফাঁড়া যায়। ভাই, আপনি চিন্তা করবেন না। ধৈর্য্য ধরেন।

 

ভদ্রলোক এখনও চুপ। নতুন বৌয়ের পাশাপাশি হেঁটে চলেছেন। আমিও পায়ে পায়ে হাঁটছি। হঠাৎ আমার মনে হল, আমি এত বকবক করছি কেন? উনি তো সাড়া দিচ্ছেন না। তার মানে আমার কথাগুলো উনার ভালো লাগছে না। কষ্টকর স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছি বলে উনি আমার প্রতি মহাবিরক্তও হতে পারেন- একথা আমার মাথায় কেন এল না? উফ্ শীট।

 

আমি প্রসঙ্গ এড়াতে বললাম- ভাই, আপনারা কি সরাসরি হাইওয়েতে উঠবেন, নাকি গাছের ছায়ায় একটু বসবেন? প্রখর রোদ তো! ছাতাও দেখছি আনেননি।

 

ভদ্রলোক ছায়ার দিকটা দেখিয়ে দিলেন। আমিও কথা না বাড়িয়ে বড় রাস্তাটার দিকে পা বাড়ালাম। দু’চার কদম পা ফেলে কী বুঝে হঠাৎ পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম মধ্যবয়সী সেই ভদ্রলোক তার কমবয়সী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মিটমিটি হাসছেন। স্ত্রীও। তারপর এ যুগের প্রেমিক প্রেমিকার মতো একজন আরেকজনের হাত ধরলেন। আশপাশে কেউ নেই। তারা ওভাবেই গাছের ছায়াতলে বসার জায়গাটার দিকে পা বাড়ালেন।

 

স্ত্রী মারা যাবার পর স্বামী বিয়ে করলেই ব্যাপারটা খারাপ হয়ে যাবে- আমি একথা বলছি না। তাই বলে এত দ্রুত ? তাও আবার সন্তানকে হাসপাতালে রেখেই ? কিভাবে সম্ভব ? সংসারে বাবা কিংবা মায়ের মৃত্যুর পর সন্তানদের মানসিক অবস্থাটা যে কি রকম বিপর্যন্ত হয় সেটা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। তাই সন্তানদেও এ ‘ট্রমা’ কাটিয়ে উঠতে না দিয়ে আমার মতে কারো বিয়ে করা উচিত নয়।

 

স্বামীহারা বেশিরভাগ নারীই স্বামীর স্মৃতি বুকে নিয়ে কিংবা ‘লোকে কী বলবে’ ভেবে দ্বিতীয় সংসারের কথা ভাবেন না। কিছু পুরুষও এমন করেন। আবার বলছি- ‘কিছু পুরুষ’। কিন্তু জীবনের প্রয়োজনটাকে প্রাধান্য না দিয়ে ‘লোকে কি ভাববে’ এমনটাকে প্রাধান্য দেয়া কি উচিত?

 

বৃদ্ধ হওয়ার আগে স্ত্রী বিয়োগ হলে আমার জানামতে সিংহভাগ পুরুষই দ্রুত বিয়ে করে ফেলেন। চিন্তার বিষয় হচ্ছে এদের মধ্যে মৃত স্ত্রীর সমবয়সী নয় বরং অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নারীই তাদের প্রথম পছন্দ। আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে। খুব কমক্ষেত্রে পুরুষরা মৃত স্ত্রীর সমবয়সী নারী খোঁজেন।

 

কমবয়সী নারী খোঁজার ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে দেখানো হয় ‘পুরুষটার বয়স বেড়েছে। শেষ বয়সে দেখাশোনা করবে কে? স্ত্রী বয়স্কই হন তাহলে তিনি বার্ধক্যের কারণে স্বামীর সেবা করতে পারবেন না।’

 

আরেকদল আছেন যারা বেশ কৌশলী। এরা হন শিক্ষিত এবং সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। তারা কমবয়সী মেয়ে (বিপত্নীক হবার পর) বিয়ে করে মানুষকে এটা বলে বেড়ান- ‘ওর বয়সী মহিলা অনেক খুঁজেছি। না পেয়ে ….’ । ‘তাহলে আরেকটু সময় নিতে পারতেন, হয়ত পেয়েও যেতেন’ এ দলটাকে নিয়ে এরকমই মন্তব্য করা উচিত।

 

প্রথম দলটির প্রসঙ্গে আসি। আমার কথা হচ্ছে বার্ধ্যক্যের কারণে আপনার নবাগতা স্ত্রী আপনার শেষ বয়সে সেবা করতে পারবেন না বলে তরুণী স্ত্রী ঘরে তুলেছেন। যদি আগের স্ত্রীকে বেঁচে থাকতেন তিনি কি বার্ধক্যে উপনীত হতেন না? নাকি তিনি বেঁচে থাকলে ‘বৃদ্ধা’ হয়ে গেছেন- এই অজুহাতে তরুনী একটা মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে ঘরে আনতেন?

 

আবার দেখেন, বৃদ্ধ বয়সে কে দেখবে? এই যুক্তিতে আপনি একজন তরুণীকে বিয়ে করে ঘরে আনলেন। দেখা গেল মেয়েটি আপনার সন্তানেরই বয়সী। তাদের ইচ্ছে করবে সেই মেয়েটিকে ‘মা’ বলে ডাকতে? না ডাকলে আপনার কি ভালো লাগবে? সন্তানেরা আপনার নির্দেশে কিংবা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবার ভয়ে না হয় সেই মেয়েটিকে মেনেই নিল। এখন মেয়েটির গর্ভে যদি ২/১ জন সন্তান এসেই পড়ে আগের সন্তানেরা মন থেকে মেনে নেবে তো ? আপনি কি পারিবারিক জটিলতা এড়াতে পারবেন ? তখন কাকে ত্যাগ করবেন? আপনার আগের সন্তানদের ? নাকি বর্তমান স্ত্রীকে?

 

অন্যদিকে ধরেন আপনি প্রৌঢ়ত্বের শেষভাগে বিয়ে করে এনেছেন কোন তরুণী/যুবতীকে। আপনার পরিবারের সবাই মোটামুটি ধার্মিক। তাই বয়স বিবেচনা না করেই আপনার সন্তানেরা মেয়েটিকে ‘মা’ বলে মেনে নিল। কিন্তু ৮/১০ বছর পর আপনি মারা গেলে মেয়েটির বয়স হবে ৩০/৩২/৩৫ (আরো আগেও যেতে পারেন) তখন মেয়েটি কোথায় যাবে? তার কি জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন হবে না? নাকি ধর্ম তাকে নিষেধ করবে? যে কারণে আপনি তাকে বিয়ে করেছিলেন ঠিক একই কারণে মেয়েটিও আবার বিয়ে করতে চাইবে। লোকলজ্জার ভয়ে যদি নাও করে তাহলে সে অনৈতিক কর্মকান্ডেও জড়াতে পারে। আপনারই কারণে আজ আরেকজন মানুষ অপরাধে জড়াচ্ছে বা জড়াতে পারে একবারও কি ভেবে দেখেছেন? (অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এরকম অহরহ ঘটছে।)

 

আগেই বলেছি স্বামী/স্ত্রী মারা গেলে কিংবা ডিভোর্স হলে আমি দ্বিতীয় বিয়ের বিপক্ষে নই। কিন্তু সঙ্গী নির্বাচন করা উচিত বয়স এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে। এক্ষেত্রে মেয়েরা অনেক পিছিয়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশে। বয়স, সামর্থ্যসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যদি কোন মেয়ে (বিধবা/ডিভোর্সী হবার পর) বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তাহলে ‘লোকে কী বলবে’ সেটা না ভেবে কাছের কাউকে ইচ্ছেটা প্রকাশ করে তার বিয়ের উদ্যোগ নেয়া উচিত। হয়ত আপনি আপনার স্বামীকে অনেক ভালোবাসতেন। হতে পারে আপনিও তাকে ‘জান’ কিংবা অন্য কোন আদুরে নামে ডাকতেন। কিন্তু তিনি এখন অতীত। শুধু স্মৃতি নিয়ে সবসময় পড়ে থাকা যায় না। স্মৃতি একটা সুন্দর আবেগ কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। আপনার এক বা দুটি সন্তান আছে। ওরা বড় হয়ে যে যার সংসারে চলে গেলে বা ব্যস্ত হয়ে পড়লে আপনি বড় একা হয়ে যাবেন। মনে রাখবেন ধর্ম আপনাকে নিষেধ করেনি। যদি তাই হতো তাহলে বিবি খাদিজা (রা.) কে রাসুল (সা:) বিয়ে করতেন না। শুধু তাই নয়, লক্ষ্য করলে দেখবেন বিবি খাদিজা (রা:)কে নিয়ে নবীজী (সা:) অনেক সুখী ছিলেন। আর সমাজ ? হ্যাঁ কেউ কেউ আপনার আড়ালে একটু হাসাহাসি করবে। তাতে কান দেবেন না। আপনি অন্যায় কিছু করেননি। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। একজন আপনার ‘জান’ ছিল। তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ভালোবেসে ছিলেন। দ্বিতীয়জনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল আর বিশ^স্ত থাকুন। একজনকে ভালোবাসলে তার চির অনুপস্থিতিতে আরেকজনকে ভালোবাসা যাবে না এমন কোন নিয়ম বা আইন নেই। যখন যার সাথে ঘর বাঁধবেন তাকে ভালোবাসুন, বিশ^াস করুণ, শ্রদ্ধা করুন। আপনার নৈতিক আর বাস্তবসম্মত আচরণের মাধ্যমেই সমাজ থেকে অনৈতিকতা অনেকাংশে দূর হবে।
আসুন আমরা সততা আর শ্রদ্ধার সাথে কৃষ্টিকে লালন করি, ন্যায্য অধিকার ভোগ করি। সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

 

# লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, সাহিত্যিক ও প্রধান শিক্ষক চেওরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



সম্পাদক: শওকত মাহমুদ
মোবাইল: ০১৮১৩-২৯২৮৩৫
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মোজাম্মেল হক মিন্টু
নির্বাহী সম্পাদক: শাহজালাল ভূঁঞা
মোবাইল: ০১৭১৭-৪২২৪৩৫, ০১৮১৯-৬১৩০০৫

সহ-সম্পাদক: শেখ আশিকুন্নবী সজীব
মোবাইল: ০১৮৪০-৪৪৪৩৩৩
সম্পাদকীয় ও বার্তা কার্যালয়: শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতান(৬ষ্ঠ তলা), স্টেশন রোড, ফেনী-৩৯০০।
ই-মেইল: ajeyobangla@gmail.com

Design & Developed BY GS Technology Ltd

error: Content is protected !!